ভালোবাসা ছিলো, তোমার কথা মনে পড়তেই এমনিতে ঠোঁট হাসিতে প্রশস্ত হয়ে যাওয়া।
সারাদিন রাত ব্যস্ততা। কাজ আর কাজ, অগুনতি ইমেইল, ফোন, চ্যাট রিপ্লাই, প্ল্যানিং, ভবিষ্যৎ গোছানো, হাজারো ব্যস্ততা। এরই মধ্যে ক্ষণেক্ষণে তোমায় মনে পড়া ছিলো ভালোবাসা।
জীবনে একটু মৃদু ভালো কিছু ঘটলে সবার আগে তোমাকে জানানো ছিলো ভালোবাসা। অভাবের সময়ে ৫০০ টাকা বেশি রোজগার করতে পারলে তোমার সাথে দুপুরের খাওয়ায় ইচ্ছাটা ছিলো ভালোবাসা, অথচ পকেটে বাড়ি ভাড়ার টাকা টাও ছিলো না।
দেখা করে এসে, সাথে সাথে কল করে মিস করতে শুরু করা ছিলো ভালোবাসা। একসাথে ঘণ্টা খরচ করেও মনের স্বাদ না মেটা ছিলো ভালোবাসা। নির্ঘুম হাজারো রাতে যখন রাত জেগে কাজ করেছি, ফ্যানও ছিলো না, তোমায় জেতার নেশায় নিজেকে জাগিয়ে রাখার নাম ছিলো ভালোবাসা।
হাত ধরে কোথাও যখন হেঁটে চলতাম, কোথায় যাচ্ছি সেটা ভুলে গিয়ে তোমার দিকে তাকিয়ে থাকা ছিলো ভালোবাসা। যখন তুমি আমার চোখের দিকে তাকাতে, তোমার চোখে অবিরাম ভালোবাসা খুঁজে চলার নাম ছিলো ভালোবাসা।
দিন রাত মিলিয়ে ১২ ঘণ্টা কাজ করার পরে, ফোনে মিষ্টি আলাপ করে তোমায় ঘুম পাড়িয়ে দেওয়া ছিলো ভালোবাসা। দুনিয়ার সবচাইতে সুন্দর কোন ফুলের চেয়ে যখন তোমার উড়ন্ত চুলের উপরে আমার দুর্বলতা, সেখানে ছিলো ভালোবাসা।
তোমাকে কাছে টেনে নিজের সাথে আকড়ে নেওয়া ছিলো ভালোবাসা। তোমার সাথে কাটানো সময়ে প্রত্যেক সেকেন্ডের নিন্মতম ভাগে আটকে যাওয়া ছিলো ভালোবাসা।
ভবিষ্যৎ নিয়ে ভাবতে, প্রত্যেকটা ভাবনায় তোমাকে দেখতে পাওয়া ছিলো ভালোবাসা। সারাদিনের ক্লান্ততার ঘানি টেনে ফোনে তোমার গলাটা শোনার কঠোর ইচ্ছে টা ছিলো ভালোবাসা। ফোনে তুমি ঘুমিয়ে গেছো, আর আমি ফোন না রেখে তোমার নিঃশ্বাসের শব্দ শুনতে থাকা ছিলো ভালোবাসা।
ভালোবাসা ছিলো ব্যস্ততার কারণে নিজের খাবার রান্না করতে না পারা এই আমি যখন তোমার জন্য রান্না করে কিলোমিটার দূরে খাবার পৌঁছে দিয়ে আসতাম। তুমি শুধু একবার বলেছিলে, “একা একা খাবে?”
তোমার ইচ্ছা করা কোন রেস্টুরেন্ট ফুড, কোন পছন্দের ফুল, আর নানান সারপ্রাইজ নিয়ে তোমার গেটের সামনে দাড়িয়ে থাকা ছিলো ভালোবাসা।
বৃষ্টিতে ভিজতে ভিজতে কয়েক কিলো পারি দিয়ে মাঝ রাতের শেষে তোমায় দেখতে আসা ছিলো ভালোবাসা।
দুজনেই পাগলের মতো ঝগড়া করতাম, প্রচন্ড চিল্লাপাল্লা করতাম, রাগে কতো জিনিস ছুড়ে ভেঙে ফেলেছি। কিন্তু শেষে তোমাকে হারিয়ে ফেলার ভয়ে সবকিছু সাভাবিক করে ফেলা ছিলো ভালোবাসা।
প্রত্যেক রাতে ঘুমানোর আগে আর প্রত্যেক সকালে ঘুম থেকে উঠে সবার আগে তোমার খেয়াল মনে আনা হলো ভালোবাসা।
তোমায় হারানোর ভয়ে মাথায় হাজারো চিন্তা কাজ করতে থাকতো, উন্মাদের মতো আচরণ করতাম, এক ছটফটানি কাজ করতো মনের মধ্যে, তারপরে তোমার একটা চুমুতে সব ঠাণ্ডা হয়ে যাওয়া ছিলো ভালোবাসা।
আমার দিন কেমন কাটলো, তারপরে শুনলাম তোমার দিনের কথা, আমরা দুজনেই স্বীকার করলাম দুজনকে কতোটা মিস করেছি, তারপরে আলাদা কোন ব্যাপারে কথা বলতে শুরু করতাম। কখনো কখনো তো টানা ৩-৪ ঘণ্টা কথা বলার পরেও ফোন রাখতে ইচ্ছা না করা ছিলো ভালোবাসা।
সূর্যাস্ত থেকে সূর্যন্ত পর্যন্ত তোমায় ভালোবাসা ছিলো ভালোবাসা। তোমায় একটু কাদতে দেখলে কলিজাটা ফেটে যাওয়া ছিলো ভালোবাসা।
সেই সস্তির নাম ছিলো ভালোবাসা, যেটা আপনাকে কল্পনা করলেই অনুভব করতাম। যে তুমি আমার, শুধু আমার।
ভালোবাসা ছিলো সেই জীবনে, সেই প্রত্যেক মুহূর্ত আর প্রত্যেক সেকেন্ডে, যেখানে তুমি ছিলে…
তাহলে এখন কি ভালোবাসা নেই? — আশেপাশে কতো লোক আর কতো আলাদা আলাদা গল্প, সমুদ্র সমান কষ্ট আর মৃদু বেঁচে থাকা। সব লেখা বাদ দিয়ে যখন তোমায় নিয়ে লিখছি, তুমিই খুঁজে নাও ভালোবাসা শুধুই ছিলো নাকি আজো ততোটাই বিরাজমান।