
হবে হয়তো ১৯শ বা ২০শ সালের কোন এক সময়। তখন আমার বয়স যে কত সেটাও সঠিক বলতে পারবো না। এই পোস্টে কিছু ছবির কথা মনে আছে, আর বাকি গুলো মনে থাকার ও কথা নয়। খুব মনে আছে, ছোট বেলায় আমার বড় চাচাতো ভাই ফটোগ্রাফার ডেকে আনতেন, তারপরে বাড়িতে লেগে যেতো সবার নতুন কাপড় পরার ধুম। হঠাৎ করে দেখলে যেনো মনে হতো সকলে একসাথে কোথাও বেড়াতে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
যখন জ্ঞান বুদ্ধি হয়েছে, মানে বছর পাঁচেক বয়স হয়ত, তখন ছবি ও যে তোলা যায় এমন বিষয়ের সাথে প্রথম পরিচিত হই। একদিনের কথা এখনো মনে পরে, সবাই কাপড় পরছে, তারপরে আমাকেও পরিয়ে দেওয়া হলো আর বড় মা তার প্রসাধনী চায়ের কাপের সেট বের করছিলেন। আমি তো ভাবলাম সবাই কোথাও যাবে আর যাওয়ার পূর্বে হয়তো সুস্বাদু দুধ চা মিলবে।
মনে মনে তো মহা আনন্দিত আমি। তারপরে দেখি সবাই টেবিলে এক সাথে বসলো, আমি ভাবছি, “যাক খুব ভালো কথা, কিন্তু চা কই?” ― তারপরে না কৌতুহল ধরে রেখে জিজ্ঞাস করলাম, চা কই? এতো ছোট ছেলেকে কে তোয়াক্কা করতো বলুন? তারপরে দেখি এক মহাকান্ড, সবাই ফাঁকা কাপ হাতে তুলে নিলো, ঘরে ফটোগ্রাফার প্রবেশ করলো আর মুখে ফাঁকা কাপ রেখে সবাই মিথ্যা চা খেতে খেতে ফ্যামিলি ফটো উঠলো। আমিও সকলের মতো করে ভঙ্গি করলাম, কিন্তু বুঝতে আর বাকি নেই আসলো ব্যাপারটা কি ঘটলো!
এরমানে ক্যামেরার সামনে মিথ্যা দেখানো আজকের কোন নতুন জিনিস নয়! ফিল্ম ক্যামেরা, অনেক সময় ফটো ডেভেলপমেন্ট করানোর সময় পাকা হাত না থাকায় এক ফটোর সাথে আরেক ফটো পেচিয়ে যেত। সিঙ্গেল ফটো তুলবেন? হুহ, ভুলেই যান, এক ফটোর দাম ২৫ টাকা (অবশ্য পরের কথা), আবার ক্যামেরা ম্যান বাড়িতে আসলে তাকে খায়িয়ে বকশিশ দিয়ে ছেড়ে দিতে হতো।
ছোট বেলায় যতদূর মনে করতে পারি, বাড়িতে ৫-৬ বার ক্যামেরাম্যান আসতে দেখেছিলাম। হয়তো আরো এসেছিলো কিনা জানি না, তখন বাড়িতে এক পলক এক জায়গায় থাকলে তো দেখতে পেতাম? বাবা, মা অনেক ছোটতে আমার নাকি অনেক ফটো উঠিয়েছিলেন। প্রায় সব ফটোই নষ্ট হয়ে গেছে অ্যালবামে পরে থেকে থেকে, পরে আমি কিছু ফটো ডিজিটাল করিয়েছিলাম। আর বাকি গুলো এখন আর চেনায় যায় না!!
দেখতেই পাচ্ছেন, এই ফটোতে আমি অনেক ছোট! ফিডারের মুখ হাতে নিয়ে কান্না করছিলাম। আমি নাকি ফটো উঠতেই দেবো না! মারাত্মক কান্দুরে ছিলাম নাকি ছোটতে!
এই ফটোতে সবার বামপাশে আমি। তারপরে আমার ছোট ভাই, তারপরে বড় চাচাতো ভাই, আর তার কোলে আমার ছোট চাচাতো ভাই!
এই ফটোতে আমার মা, আর আমার বাবার কোলে আমি! এই ফটো নাকি আমাদের উপজেলার সরকারি হাসপাতালে নেওয়া হয়েছিল। ছোট বেলায় খুব অসুখে ভুগতাম, মানে ডাক্তারখানা যাওয়া লেগেই থাকতো। গ্রামে সকলে যেখানে স্বাস্থ্যকর্মীর হাতে টিকাদান কেন্দ্র ক্যাম্পেইনে টিকা দিয়েছিলো। বাবা আমাকে হাসপাতালে দিয়ে টিকা দিয়ে নিয়েছিলেন। আর এই জন্য জানেন, আমার হাতে কোন ইনজেকশনের দাগ নেই (জানি না এটাই আসল কারন, নাকি আমার শরীরে দ্রুত ঘা শুখায়)!!
আলদা পোজে, একই জায়গায় সেই আমি!
মনে আছে সে দিনের কথা, মা হঠাৎ করে এসে বললেন, “হীরক (বড় কাকার ছেলে) ক্যামেরা ম্যান এনেছে ফটো উঠালে রেডি হয়ে যা” ― তখন গ্রামের আরবী মোক্তবে ভর্তি হয়েছিলাম, তাই পাঞ্জাবি পড়তাম মাঝেমাঝে, যেহেতু পাঞ্জাবি পরে ফটো ছিল না, তাই দুই ভাই মিলে ধর্মীয় পোশাকে ফটো তুলেছিলাম। আমার আজো স্পষ্ট মনে আছে সেই দিনের কথা!!
আরো কিছু পুরাতন ফটো আছে, কিন্তু মুহূর্তে ফোনে নেই, প্লাস সেগুলো আরেক পোস্টে শেয়ার করার জন্য জমিয়ে রাখলাম। নতুন পোস্ট মানেই তো নতুন কোন পুরাতন গল্প, সেই পুরাতন স্মৃতি যেগুলো আমার সাথেই মৃত হয়ে যেত, কিন্তু এখানে জমা থাকবে অনেক কাল!