টেলিফোন কেলেঙ্কারি!

প্রথম মোবাইলে কথার কাহিনী তো সংক্ষেপে আলোচনা করেছিলাম এই পোস্টে, আজ প্রথম টেলিফোনে কথা বলার অভিজ্ঞতা শেয়ার করবো। তবে একে অভিজ্ঞতা না বলে আমি কেলেঙ্কারিই বলবো! কেন? এমনি উত্তর পেয়ে যাবেন চলুন!

সালটি ছিল ২০০৬, আমি কেবল গ্রাম ছেড়ে ছোট শহরের স্কুলে ভর্তি হই। ছোট থেকে আমার মা বাবা যতোটা না ভালোবাসতো এর চেয়েও বেশি ভালোবাসতেন আমার ফুফু। আমার ফুফু তখন ইউনিয়ন পরিষদের মহিলা মেম্বার ছিলেন, আর আমাকে প্রতিনিয়ত গ্রামের বাড়ি থেকে হাত ধরে টাউনের স্কুলে নিয়ে যেতেন এমনকি হাত ধরে রাস্তা পারাপার পর্যন্ত করিয়ে দিতেন। যদিও আজকের দিনের ক্লাস ২ এ পড়া বাচ্চাদেরও হাত ধরিয়ে পার করতে হয় না, উলটা ওরা আপনাকেই রাস্তা পার হওয়া শেখাবে।

গল্পের মধ্যে গল্প

যা বাবা! আরেক গল্প মনে পরে গেলো, মানে গল্পের মধ্যে আরেক গল্প! কয়েকদিন পূর্বে আমার ভাবী আমাকে ভাতিজাকে স্কুল থেকে নিয়ে আসতে বললেন একটু, আমি স্কুলে গেলাম, ভাইয়ের বাসা থেকে ভাতিজার স্কুল মাত্র হাফ কিলোমিটার দূরে। তবে মেইন রোড এবং আরো দুই চারটে গলি পার হয়ে স্কুল থেকে বাসায় ফিরতে হয় তার জন্যে বড় কাউকে গিয়ে আনতে হয়। না হলে আমার ভাতিজা যে জিনিষ, এখনি নিমিশে দুই চারটা বউ চালাতে পারবে! (হেহে… একটু বেশি বলে ফেললাম!)

যাই হোক, স্কুলের গেটে দাড়িয়ে রয়েছি আর মোবাইল টিপাটিপি করছি, ইচ্ছা না থাকলেও মোবাইলে বেশ মনোযোগ প্রদান করেই টিপছি, কেননা অনেকের মা, বোন আমার মতোই স্কুল থেকে কেউকে বাড়ি নিয়ে যেতে এসেছেন। আর আমার তো বিশাল বড় আর কালারিং চুল তাই আমার দিকেই সবাই তাকিয়ে আর নিজেদের মধ্যে বিড়বিড় করছেন। খুব মোবাইল টিপে আমি বিরক্ত লাগানো থেকে বিরত রয়েছিলাম। আরে বাবা এর মধ্যে তাকিয়ে দেখি আমার ভাতিজা দশ পা দূরে অলরেডি চলেই গেছে।

আমিই পেছনে দৌড় দিলাম, “আরে দাড়া, আমি তোর জন্য দাড়িয়ে রয়েছি দেখতে পাসনি?” কোন উত্তর নেই! খুব দ্রুত হাটা চলছে, ব্যাগের ভরে বেঁকে শেষ, আমি বইটা নিতে চাইলাম আমাকে দিল না, ওকে! মেবি অ্যাটিটিউড প্রবলেম!! এরপরে হাত ধরতে চাইলাম, কেননা রাস্তা পার হতে হবে, ধুরু হাতটাও সটকে দিল “অ্যাটিটিউড প্রবলেম কনফার্মড”। এরপরে আমি একটু মোবাইলে চোখ মারতেই দুই সেকেন্ডের মধ্যে ভাতিজা হাওয়া! কই গেলো রে বাবা?

হতে পারে কোন বন্ধুর সাথে হয়তো চলে গেছে, আমি বাসা পৌঁছে দেখি ব্যাটা কোন যেন বাইপাস ধরে আমার কমপক্ষে ৫ মিনিট আগেই বাড়ি আসা ম্যানেজ করে ফেলেছে! মানে আমি যে ওকে নিতে গেছিলাম না উল্টে ও আমাকে নিয়ে আসলো সেটাই ভেবে পাচ্ছিলাম না!

মূল কাহিনীতে ফেরত

তো বুঝুন এবার, আমাকে ১০ বছর বয়সে হাত ধরে রাস্তা পার করা শেখানো হচ্ছিল! যাই হোক, স্কুল শেষে আর স্কুলে যাওয়ার সময় আমাকে ইউনিয়ন পরিষদে আমার ফুফুর অফিসে যেতে হতো মানে বসে থাকতে হতো। আর আমি আমার ক্যালচার অনুসারে এক ঘরে টিকে থাকার ব্যাক্তি (মানে বাচ্চা, আরকি…) তো মোটেও নই! তো বেশিরভাগ সময়ই সচিবের অফিসে ঢুকে পড়তাম, ঐ বেটার রুমে অনেক কাগজপাতি আর ঐ বেটা টেলিফোনে কথা বলে, আর ঐ টেলিফোনই তো আমার রোগ!!

মাঝে মাঝে দেখি চৌকিদার (গ্রাম পুলিশ) গুলোও উপজেলা অফিসে বা টাউনের অনেক অফিসে টেলিফোন করতো। মাঝেমাঝে এটাই ভাবতাম, আরে আমি এখনো টেলিফোনে কথা বলতে পারলাম না? অ্যাহ? চৌকিদার হয়েও টেলিফোনে কথা বলে!! ধুরু! এভাবে আর হবে না, আমাকেও কথা বলতে হবে।

রুম থেকে সবাই শটকে পড়লেই আমি টেলিফোনে ঘুতাঘুতি শুরু করতাম, রিসিভারটা তুলতাম বিপবিপ করতো, দুই চারটা নাম্বার বাটন টিপতাম আবার রেখে দিতাম (যুদ্ধের পূর্ব প্রস্তুতি আর কি!)। আরে কথা যে বলবো, বলবো কার সাথে? না আজ কথা বলতেই হবে, মোবাইলে সেই বার কথা বলতে গিয়ে বলতেই পারিনি উল্টে ৩ টাকা লস, ভাবা যায়?

তো এখন দরকার নাম্বার, আর আমি দেখে নিয়েছি আসলে টেলিফোনে একটা বাটন রয়েছে যেটা প্রেস করলে লাস্ট কলারের কাছে কল চলে যায়। কিছুক্ষণ আগেই এক চৌকিদার বিদ্যুৎ অফিসে টেলিফোন করলো তারপরে রুম থেকে চলে গেলো এক কাগজ হাতে করে নিয়ে। আরে ব্যাস, এই তো সুযোগ! ইয়েস, হাত ছাড়া করা যাবেই না।

রিসিভার উঠালাম, লাস্ট কলার রিডায়াল বাটন প্রেস করলাম, কানে আমার টেলিফোনের রিসিভার! অহ ইয়া বেবি, কিছুক্ষণের মধ্যেই কানেক্ট হতে চলেছে আমার জীবনের প্রথম টেলিফোন কল, ভাবা যায়? বাট একি? অনেক দ্রুতই কল রিসিভ করে ফেলল…

টেলিফোনের ঐপার থেকেঃ হ্যালো, হ্যাঁ বলুন!
আমিঃ ইয়ে মানে… (হার্ট বিটের ধকাস ধকাস শব্দ খালি কানেই শোনা যাচ্ছিল), এটা কি ম…ফিজের নাম্বার? (হ্যাঁ, মফিজ নামই বলেছিলাম, মনে আছে আমার, ঢপের গল্প ভাববেন না যেন আবার)
টেলিফোনের ঐপার থেকেঃ না তো বাবু, তুমি কাকে কল করেছো?
আমিঃ ঐযে বললাম না, মফিজকে, ওকে কাকু… বাই… রং নাম্বার… (ধরপর করে রিসিভারটা রাখতে পারলে বাঁচি, না হলে দেরি হলে কেস খেয়ে যেতে পারি, প্রথম অভিজ্ঞতার জন্য এটুকুই যথেষ্ট!”)

বাট কপাল খারাপ বুঝলেন! ফোন রেখেই দেখি দরজায় সেই চৌকিদার কখন থেকে যে দাড়িয়ে রয়েছে সালা আমি টেরই পাইনি। এখন কি হবে?

চৌকিদারঃ “কি ব্যাপার কোথায় ফোন করেছিলে?”
আমিঃ “ইয়ে মানে কাকু হেহে ঐযে তোমার ডায়াল করা লাস্ট নাম্বারে!!”
বেটা চৌকিদারঃ “মফিজের নাম্বার বললে কেন?” (এই রে… কেস খেয়ে গেছি…!!!)
আমিঃ “হেহে কাকু, কি যায় আসে? কে কল করেছে সেটা তো জান্তেই পারবে না!!” (আসলে হয়েছে কি, ইউনিয়ন পরিষদের টেলিফোনটাতে ডিসপ্লে ছিলনা, তাই নাম্বার দেখতে পাওয়া যেতো না, তাই আমার এই ওভার কনফিডেন্স জন্মে গেছিলো। আরে বাচ্চা ছেলে তো, আমার কি এতো হুস আছে নাকি?”
চৌকিদারঃ “আরে বাবা ওদের টেলিফোনে তো নাম্বার দেখা যায়!”
আমিঃ “তাই নাকি কাকু? সেটা আমি জানি নাকি? যদি জানতাম কল করতাম কাকু বল? ইয়ে কাকু… আমার ফুফুকে যেন বল না হ্যা? কেমন?”

কে শোনে ভাই কার কথা ফুফুর কাছে বেটা চৌকিদার ভালো সাঁজতে আগেই বলে দিল সব কথা। আমি কেসের উপর কেস খেয়ে গেলাম। যা… একটা টেলিফোন কলই না হয় করেছিলাম, শেষে কেলেঙ্কারি হয়ে গেলো…!!! শেষে সেই কথা পুরো ইউনিয়ন পরিষদ ছড়িয়ে পড়ল, আর কি করার, আমাকে মাইর খেতে হয় নি ফুফুর হাতে এটাই অনেক!!


তো এই ছিল আমার টেলিফোন কেলেঙ্কারি… আপনাদের ও এরকম কোন কাহিনী থাকলে নিচে কমেন্ট করে জানাতে পারেন, দেখি কার কাহিনী কতো মজার হয়!! ওকে বাই, আবার ওয়্যারবিডিতে আর্টিকেল লিখতে বসতে হবে।

লেখকের সম্পর্কে

কমেন্ট করুন

Your sidebar area is currently empty. Hurry up and add some widgets.